খ্রীস্টীয় ২০১৫ সালের ১৩ই এপ্রিল ‘বাংলা ক্যালেন্ডার নিয়ে অল্প কথা’ শিরোনামে সচলায়তনে একটি লেখা প্রকাশ করেছিলাম যার প্রতিপাদ্য ছিল বাংলা ক্যালেন্ডারের উৎপত্তি । সেখানে খ্রীস্টপূর্ব ৬৯১ সালে কৌলিয় শাসক অঞ্জন কর্তৃক পহেলা বৈশাখে নববর্ষ উদযাপনের বিষয়টি উল্লেখ করেছিলাম যা এই অঞ্চলের জ্ঞাত ইতিহাসে এই উৎসবের রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতার প্রথম ঘটনা। এই বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যসূত্রগুলো পাঠে লব্ধ পর্যবেক্ষণসমূহ এখানে লিপিবদ্ধ করা হলো।
পাঠ পর্যবেক্ষণঃ
১.
আদি ভারতবর্ষীয় প্রজাতান্ত্রিক আমলে অর্থাৎ মহাজনপদকালে, বর্তমান কালের নেপাল ও ভারতের উত্তর প্রদেশ সীমান্তে রোহিনী নদীর তীরে কৌলিয় গণরাজ্য ছিল। গণরাজ্য বলে তার শাসক অঞ্জনের উপাধি ‘সম্রাট’ নয়, বরং ‘গণপতি’ অথবা ‘মহারাজা’ হওয়া বিধেয়। তাঁর অধীনস্থ প্রতিনিধি প্রশাসকগণের উপাধি ছিল ‘রাজা’। এই লেখায় পরবর্তীতে তাঁকে কেবল অঞ্জন হিসাবে উল্লেখ করা হবে। ইংলিশে লেখা ঐতিহাসিক ভাষ্যগুলোতে তাঁকে Anjana, Anjan, Eetzana ইত্যাদি নামে উল্লেখ করা হয়েছে।
২.
কৌলিয়দের দুটি প্রধান সেটেলমেন্ট ছিল, দুটিই বর্তমান নেপালে অবস্থিত। তার একটি নওলপড়শী জেলার রামগ্রাম পৌরসভার শতঘরে, অন্যটি রূপান্দেহি জেলার দেবদহে। কৌলিয়রা ইক্ষ্বাকু বংশীয় ক্ষত্রিয়। সময়কাল এবং ভৌগলিক অবস্থান বিচার করলে কৌলিয় গণরাজ্য মল্লদের অন্তুর্ভুক্ত হবার সম্ভাবনা আছে। মল্লরা প্রবল প্রতাপশালী ছিল বলে কৌলিয়রা সরাসরি মল্লদের অন্তর্ভুক্ত হলে তাদের স্বতন্ত্র অস্তিত্ত্ব থাকার কথা নয়। সেক্ষেত্রে কৌলিয়রা সরাসরি মল্লদের অন্তর্ভুক্ত না হয়ে বৃজি/ভাজ্জিকা কনফেডারেসির অন্তর্ভুক্ত হবার সম্ভাবনা বেশি হয়।
৩.
- কৌলিয় গণপতি দেবদহের পুত্র অঞ্জন, কন্যা কাচ্চানা/কাহ্নানা।
- অঞ্জনের দুই স্ত্রী - সুলক্ষণা ও যশোধরা।
- অঞ্জনের দুই পুত্র সুপ্পবুদ্ধ ও দণ্ডপাণি, দুই কন্যা মায়া ও প্রজাপতি।
- অঞ্জনের পুত্র দণ্ডপাণি অকৃতদার ছিলেন।
- অঞ্জনের পুত্র সুপ্পবুদ্ধের দুই স্ত্রী - অমিতা ও পামিতা। পামিতা সম্রাট শুদ্ধোধনের ভগ্নী, গৌতম বুদ্ধের পিসী।
- সুপ্পবুদ্ধ ও অমিতার পুত্র দেবদত্ত। একটি বহুল প্রচলিত গল্প হচ্ছে, দেবদত্তের সাথে হাঁস শিকার নিয়ে গৌতম বুদ্ধের তর্ক হয়।
- সুপ্পবুদ্ধ ও পামিতার কন্যা যশোধরা। যশোধরা গৌতম বুদ্ধের পিসতুতো বোন ও স্ত্রী।
- অঞ্জনের কন্যা প্রজাপতি গৌতম বুদ্ধের মাসী, পালিতা মাতা বা দুধ মা, এবং তাঁর শরণ গ্রহনকারী প্রথম নারী। তিনি পরবর্তীতে মহাপ্রজাপতি গৌতমী নামে পরিচিতা হন।
- অঞ্জনের কন্যা মায়া ও সম্রাট শুদ্ধোধনের পুত্র গৌতম বুদ্ধ।
- অতএব গণপতি অঞ্জন গৌতম বুদ্ধের মাতামহ।
৪.
Reverend P. Bigandet-এর ভাষ্য অনুযায়ী, গণপতি হবার পরে অঞ্জন তখনকার প্রচলিত বর্ষপঞ্জীতে বিদ্যমান ত্রুটি সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তিনি দেবীলা নামের একজন গণিতশাস্ত্রবিদ ঋষির (রথী) শরণাপন্ন হন। তাঁরা এই মতে পৌঁছান যে চলমান ৮৬৪০-তম কৌদজাবর্ষ/কৌদ্দাবর্ষের তাবাওং/তাবসং নামক মাসের শুক্লপক্ষের প্রথম দিন (প্রতিপদ) শনিবার এর গণনা শেষ হবে এবং তাগু নামক মাসের শুক্লপক্ষের প্রথম দিন রবিবার থেকে নতুন বর্ষ বা অঞ্জনবর্ষ গণনা শুরু হবে। জ্যোতিষীদের মতে, তাগু মাসের শুক্লপক্ষের প্রথম দিন শুভ বলে সেই দিন থেকে নতুন যুগের (অঞ্জনবর্ষ/অঞ্জন সম্বাত) সূচনা হবে। এখান থেকে ধারণা করা যাচ্ছে, কৌদজাবর্ষ এবং অঞ্জনবর্ষ উভয়টিই হয় চান্দ্রবর্ষ (lunar calendar) অথবা চান্দ্রসৌরবর্ষ (lunisolar calendar)।
৫.
বোঝা যাচ্ছে, অঞ্জনের সময়কাল থেকে বর্ষ গণনা শুরু হয়নি, বরং তার কমপক্ষে ৮৬৪০ বছর আগে থেকে আনুষ্ঠানিক বর্ষ গণনা চলছে। এটি অবশ্যই নতুন কোন তথ্য নয়। ভারতবর্ষীয় গণিতশাস্ত্রবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, ও জ্যোতিষীগণ অঞ্জনের বহু আগে থেকে পৃথিবী, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র ইত্যাদির গতিপথ, পরিভ্রমণকাল, সময় ইত্যাদির হিসাব প্রায় নির্ভুলভাবে করা শিখে গিয়েছিলেন। সুতরাং পুরাকাল থেকে ভারতবর্ষে একই সময়ে একাধিক ক্যালেন্ডার প্রচলিত থাকাটা স্বাভাবিক। এই কারণে, ‘কৌদজাবর্ষ’ এবং ‘অঞ্জনবর্ষ’কে ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত করতে হয়েছে।
৬.
তাবাওং/তাবসং এবং তাগু কোন কোন মাস? L D Swamikannu Pillai-এর মতে, এরা যথাক্রমে ফাল্গুন ও চৈত্র। কিন্তু এগুলো তো সৌরবর্ষের মাস! সৌরবর্ষের মাসে শুক্লপক্ষ কোন নির্দিষ্ট তারিখে শুরু হয় না, বরং প্রতি বছরে এটি পরিবর্তিত হয়। সুতরাং অঞ্জনবর্ষ গণনা যে চৈত্র মাসের গোড়াতে শুরু হয়েছিল অমনটা নাও হতে পারে। Puran Chandra Mukherji-র ভাষ্য অনুযায়ী, কৌদ্দাবর্ষ মার্চে শেষ হয় এবং অঞ্জনবর্ষ এপ্রিল থেকে গণনা শুরু হয়। তিনি ৬৯১ খ্রীস্টপূর্বাব্দের এপ্রিল থেকে অঞ্জনবর্ষ গণনা শুরু হয়েছে বলে মত দেন। কিন্তু এপ্রিলের কখন? Bala Chandra Sharma-র মতে এটি চৈত্রের শেষ দিনে।
৭.
অঞ্জনের স্ত্রী যশোধরার আরেক নাম রূপাদেবী বা রুম্মিনদেই। অথবা রুম্মিনদেই অঞ্জনের তৃতীয় কোন স্ত্রী। একবার অঞ্জন ও রুম্মিনদেই দেবদহ ও কপিলাবাস্তুর মধ্যবর্তী জঙ্গল ভ্রমণের সময় সেখানে এক বণিকের উদ্যান দেখতে পেয়ে চমৎকৃত হন। রুম্মিনদেই অঞ্জনের কাছে অমন উদ্যানের আবদার করলে তিনি তা নির্মাণ করে রুম্মিনদেই-এর নামে নামকরণ করেন। মাগধী উচ্চারণে ‘রুম্মিনদেই’ হয়ে যায় ‘লুমিনদেই’ ফলে পরবর্তীতে উদ্যানটি লুম্বিনী নামে পরিচিত হয়। Vincent A. Smith-এর ভাষ্য অনুযায়ী, ‘রুম্মিন’ নামটি কার্যত ‘লুম্বিনী’ বা ‘লুম্মিনি’র সাথে অভিন্ন, কারণ এটি ঐ স্থানে প্রাপ্ত শিলালিপিতে মাগধী ভাষায় লেখা আছে। সংস্কৃত শব্দের শুরুর বা মাঝের ‘র’ মাগধীতে সর্বদা ‘ল’ দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী কৌলি অর্থাৎ দেবদহ বা ব্যাঘ্রপুর শহর রুম্মিনদেই থেকে সতের বা আঠারো মাইল পূর্বে বাঘেলা নদীর তীরে অবস্থিত। পরবর্তীতে এই বাগানে গৌতম বুদ্ধের জন্ম হয়। মগধের সম্রাট অশোক এখানে স্তম্ভ স্থাপন করেন। ১৮৯৫ সালে Archaeological Survey of India’র পক্ষে জার্মান প্রত্মতাত্ত্বিক Alois Anton Führer মাটি খুঁড়ে লুম্বিনী পুনরাবিষ্কার করেন।
৮.
লুম্বিনী উদ্যানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের বিষয়ে জ্যোতিষীগণ অঞ্জনকে জানান চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের প্রথম দিনটি শুভ। ফলে সেই দিন আনুষ্ঠানিক পূজা ও আনন্দোৎসবের মধ্য দিয়ে লুম্বিনী উদ্যান উদ্বোধন করা হয়। এই দিনটি অঞ্জনবর্ষ শুরুর দিন হতে পারে। কারণ অঞ্জনের সময়কালে ঘটা এই দুটো ঘটনাই চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের প্রথম দিনে ঘটেছে।
৯.
লুম্বিনী উদ্যানের উদ্বোধনের সাথে মিলে যাক বা না যাক এটা মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে যে, ৬৯১ খ্রীস্টপূর্বাব্দের চৈত্র অথবা এপ্রিল মাসে অঞ্জন নতুন বর্ষ গণনা শুরু করেছেন। চৈত্র মাসের শেষের দিকের কোন একদিনে যেদিন শুক্লপক্ষের প্রথম দিন ছিল সেদিন নতুন বর্ষ গণনার পূজাপাঠ হয়েছিল (সম্ভবত চৈত্র সংক্রান্তিতে)। যেহেতু অঞ্জন মাসগুলোর নতুন করে নামকরণ করেননি বা শুরু নির্ধারণ করেননি তাই ধারণা করা যাচ্ছে পূজাপাঠ যেদিনই হোক নতুন বছর গণনা বৈশাখ মাস থেকেই শুরু হয়েছে। চান্দ্র ও সৌর বর্ষের দৈর্ঘ্যের পার্থক্যের হিসাব পণ্ডিতদের তখনই জানা ছিল, তাই অঞ্জনবর্ষ গণনায় প্রয়োজনীয় দিন-সমন্বয়ের ব্যবস্থা থাকার কথা।
১০.
অঞ্জনবর্ষের শুরুর আনুষ্ঠানিক আনন্দ-আয়োজন চৈত্রের শেষ দিনে ও বৈশাখের প্রথম দিনে হলেও এই সময়টাতে লোক উৎসব সম্ভবত আগে থেকেই প্রচলিত ছিল। নয়তো অঞ্জনের মতো একজন গৌণ গণপতি এক বছর রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় উৎসব আয়োজন করে থাকলেও পরের বছরগুলোতে সেটা আর ব্যাপক হারে আয়োজিত হবার কথা নয়। তাছাড়া গান্ধারা (বর্তমান আফগানিস্তান) থেকে চম্পা (বর্তমান ভিয়েতনাম) পর্যন্ত এই লোক উৎসবটির ভৌগলিক বিস্তৃতি যে ব্যাপক তাতে বোঝা যায় স্থানভেদে সেটির উৎস একাধিক, এবং স্থানভেদে এর প্রচলনের সময়কালও ভিন্ন।
১১.
প্রাচীন কাল থেকে ভারতবর্ষে মকর সংক্রান্তি বড় উৎসব হিসাবে পালিত হয়ে আসছে। পৌষের শেষ দিন থেকে মাঘের প্রথম দিনে সূর্য ধনু থেকে মকরে প্রবেশ করে বলে এই দিনকে মকর সংক্রান্তি বলা হয় (জানুয়ারি ১৪/১৫)। জ্যোতিষ ও ধর্মীয় বিবেচনায় শুভ হওয়া ছাড়াও এই সময়ে এই অঞ্চলে আবহাওয়া ভালো থাকে বলে তা উৎসবের উপযুক্ত সময়। কিন্তু তখনো এই অঞ্চলে রবি শস্য তোলার সময় হয়নি। রবি শস্য তোলা শুরু হয় বৈশাখ থেকে। এই কারণে এই অঞ্চলে মকর সংক্রান্তির ধর্মীয় গুরুত্ব যতটা, লোক উৎসব হিসাবে তার গুরুত্ব ততটা নয়। লোক উৎসবগুলো তখনই আয়োজিত হয় যখন লোকের হাতে যথেষ্ট অর্থাসমাগম হয়।
১২.
ধর্মীয় কারণে মকর সংক্রান্তি সবসময় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে আসছিল। চৈত্র-বৈশাখের উৎসবটির সাথে ধর্মীয় যোগ না থাকায় সেটি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পায়নি। অঞ্জনই প্রথম চৈত্র-বৈশাখের উৎসবটিকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেন। সুতরাং অন্তত এই অঞ্চলের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে পহেলা বৈশাখ নববর্ষ পালনের শুরুর কৃতিত্ব অঞ্জনের প্রাপ্য হয়। অনেক দেশে এই উৎসবটিকে যে সংকার্ণ/সোংকার্ণ/সাংগ্রাইং বলা হয় সেই নামের উৎপত্তি ‘চৈত্র সংক্রান্তি’র সংক্রান্তি থেকে।
১৩.
খ্রীস্টপূর্ব ৬৯১ সালে অঞ্জন যে বর্ষ গণনা শুরু করেন খ্রীস্টপূর্ব ৫৪৫ সালে সেটাকে সংশোধন করে করা হয় বৌদ্ধ বর্ষ নামের চান্দ্রসৌরবর্ষ (lunisolar calendar)। আর ৭৮ খ্রীস্টাব্দে প্রচলিত বর্ষপঞ্জিকে আবার সংশোধন করে চালু করা হয় শকাব্দ নামের সৌরবর্ষ (solar calendar)। এই দফাতে সংশোধনের দরুণ বছরের শুরুটা পিছিয়ে ২২শে মার্চে চলে আসে (লিপ ইয়ারে ২৩শে মার্চ)। Harry C. Norman অঞ্জনের কৃতিত্ব মানতে নারাজ তিনি একজন গৌন শাসক এই যুক্তিতে। কিন্তু একজন গৌন শাসকের উদ্যোগে একদল প্রতিভাবান গণিতশাস্ত্রবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, ও জ্যোতিষী একটি সঠিক, যথার্থ, নতুন ক্যালেন্ডার আবিষ্কার করতে পারবেন না তা হতে পারে না। বৌদ্ধ বর্ষ ও শকাব্দের উৎসে অঞ্জনবর্ষ থাকা না থাকা নিয়ে বিতর্ক করা যায়। কিন্তু এই লেখার উদ্দেশ্য বর্ষপঞ্জির উৎপত্তি নয়। এর প্রতিপাদ্য হচ্ছে পহেলা বৈশাখের উৎসব।
১৪.
এপ্রিলের ১৩ থেকে ১৬ তারিখ পর্যন্ত বার্মায় থিঙইয়ান বা বর্মী নববর্ষ উদযাপিত হয়। Maung Htin Aung-এর ভাষ্য অনুযায়ী বর্মী ক্যালেন্ডারের উৎস বৌদ্ধ ক্যালেন্ডার যা আসলে অঞ্জনবর্ষ থেকে আগত। তার মানে দাঁড়ায় বার্মাতে উদযাপিত এই উৎসবের পেছনে অঞ্জনের সংযোগ আছে। ফসল তোলার সময় ছাড়াও সম্ভবত বিদ্যমান সনাতন ধর্মীয় মকর সংক্রান্তির বিপরীতে বৌদ্ধরা নিজেদের একটি লোক উৎসব দাঁড় করাতে চাইছিলেন। ফলে প্রচলিত চৈত্র-বৈশাখের উৎসবটি, যেটিকে অঞ্জন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিলেন, সেটিকে বৌদ্ধরা নিজেদের লোক উৎসব হিসাবে গ্রহন করেছিলেন। ফলে অঞ্জন বা বুদ্ধের জন্মভূমির পশ্চিম দিকের পরিবর্তে পূর্ব দিকের দেশগুলোতে, যেখানে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার ঘটেছিল, সেখানে এই উৎসবটি বেশি বিস্তৃতি লাভ করে।
১৫.
একই দিনগুলোতে উদযাপিত থাইল্যান্ডের ‘সংকার্ন’, কম্বোডিয়ার ‘চল চনাম থমাই’ বা ‘মহা সংকার্ন’, লাওসের ‘পী মাই’ বা ‘সোংকার্ন’ উৎসবের উৎসের সন্ধান করলে পেছনের গল্পগুলোতে একটু এদিক সেদিক হয় বটে, কিন্তু উৎসবের শুরুর সাথে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসারের সম্পর্কটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ধারণা করা যাচ্ছে স্থানীয় লোক উৎসবের সাথে বৌদ্ধ ধর্মীয় সংযোগের মাধ্যমে এটি বিশাল ব্যপ্তি পেয়েছে ও সংহত হয়েছে। লোক উৎসব হিসাবে শুরু হওয়া এই আয়োজনটি ইতিহাসের এক পর্যায়ে ধর্মীয় স্পর্শ পেলেও সময়ের পরিক্রমায় এটি আবার তার সেক্যুলার রূপে ফিরে গেছে। এই দিনে কেউ কেউ ধর্মীয় আচার পালন করছেন বটে, তবে আখেরে তা আর মুখ্য থাকেনি, উৎসবটি নিখাদ লোক উৎসবে পরিণত হয়েছে।
১৬.
এই উৎসবের প্রচলনের বিষয়ে গণপতি অঞ্জনকে আসলে খুব একটা কৃতিত্ব দেবার কিছু নেই। তবে অন্তত ভারতবর্ষে এই উৎসবের প্রথম রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার কৃতিত্ব তার পাওনা হয়। কালের গোনাগুনতির ক্ষেত্রে ইতিহাসের কোনো না কোনো জায়গা থেকে আমাদের শুরু করতেই হয়। সেক্ষেত্রে এই অঞ্চলে পহেলা বৈশাখের আনুষ্ঠানিক উদযাপন ৬৯১ খ্রীস্টপূর্বে গণপতি অঞ্জন কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানটি থেকে ধরা যেতে পারে, অন্তত যত দিন পর্যন্ত না অন্য কোনো ঐতিহাসিক ভাষ্য আবিষ্কৃত হয়।
তথ্যসূত্রঃ
১. Reverend P. Bigandet, Bishop of Ramatha, Vicar Apostolic of Ava; ‘The Life or Legend of Gaudama The Buddha of The Burmes’; Fourth Edition; Kegan Paul, Trench, Trübner & Co. Ltd. Dryden House, Gerrard Street, W. London; 1911
২. Puran Chandra Mukherji; ‘A report on a tour of exploration of the Antiquities in the Tarai, Nepal the region of Kapilavastu during February and March 1899’; Office of the Superintendent of Government Printing, India; Calcutta; 1901
২.১. Vincent A. Smith, (Trinity College, Dublin), of the Indian Civil Service; Prefatory Note
৩. Harry C. Norman; ‘A Defence of the Chronicles of the Southern Buddhists from charges brought against them by certain modern scholars, with some remarks on the Eetzana Era’; The Journal of the Royal Asiatic Society of Great Britain and Ireland; London; 1908
৪. J. P. Sharma; ‘Republics in Ancient India: c. 1500 B.C. - 500 B.C.’; E. J. Brill; Leiden, The Netherlands; 1968
৫. Bala Chandra Sharma; ‘Nepali Sanskriti’; 1963
৬. Bajranandra Bajracharya; ‘Kapilvastuko Ruprekha’; 1972
৭. L D Swamikannu Pillai; ‘An Indian Ephemeris’; The Superintendant, Government Press; Madras; 1922
৮. Maung Htin Aung; ‘Burmese History before 1287: A Defence of the Chronicles’; Oxford: The Asoka Society; 1970.
মন্তব্য
সচলায়তনে লেখা যাইতেছে তাইলে?
আমিও ভেবেছিলাম পোস্ট দেয়া যাবে না। পরে অরূপের পোস্ট দেখে ভাবলাম চেষ্টা করে দেখা যাক।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
নতুন মন্তব্য করুন